শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

TheArcArt

কলকাতা | ফিরে দেখা রুশ বিজয় দিবসের ইতিহাস

AD | ০৭ মে ২০২৫ ১৫ : ০১Abhijit Das


রুশ বিজয় দিবসের ৮০ বছর পরে সেই ইতিহাস ফিরে দেখা যেমন যায়, তেমনই ইতিহাসকে মিলিয়ে দেখা যায় বর্তমানের আয়নায়। আর আজকাল ডট ইনের সঙ্গে কথাবার্তায় সেই বিশ্লেষণ করলেন রুশ কনসাল জেনারেল ম্যাক্সিম কোজলভ। 

প্রশ্ন: বিজয় দিবসের তাৎপর্য যদি আমাদের কাছে আপনার মতো করে বলেন।

উত্তর: মানব ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও রক্তাক্ত সংঘাত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ– যা রাশিয়ার মানুষের হৃদয়ে 'মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধ' নামে চিরস্মরণীয়। সেই যুদ্ধ পৃথিবী থেকে কেড়ে নিয়েছিল ছ'কোটিরও বেশি প্রাণ। 

২০২৫ সালের ৯ মে আমরা উদযাপন করব সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই গৌরবময় ঐতিহাসিক বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী। রুশ জনগণের জন্য এই দিনটি কেবল একটি ছুটির দিন নয়, এটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রদত্ত অসামান্য ত্যাগের এক গভীর স্মারক।

নাৎসি জার্মানি ও তার সহযোগীদের হাতে এই মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন দু'কোটি সত্তর লক্ষ সোভিয়েত নাগরিক। লক্ষ লক্ষ মানুষকে সহ্য করতে হয়েছিল মৃত্যু শিবিরের নির্মম অত্যাচার, হারাতে হয়েছিল নিজেদের ঘরবাড়ি,  কিংবা কেউ-কেউ বাধ্য হয়েছিলেন জার্মানির দখলে থাকা এলাকায় শ্রম দিতে। আমাদের দেশের এমন কোনও পরিবার ছিল না যাঁরা এই যুদ্ধের ছায়া থেকে মুক্ত ছিলেন, যাঁরা এই যুদ্ধের যন্ত্রণা অনুভব করেননি।

আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রতিদিনই লড়েছেন—কারও হাতে ছিল অস্ত্র, কেউ খুঁড়েছেন প্রতিরক্ষা পরিখা, কেউ বা আহত সৈনিকদের সেবা করেছেন ফিল্ড হাসপাতালে। কেউ যোগ দিয়েছেন পার্টিজান বাহিনীতে, আবার কেউ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন পিছনের সারিতে। প্রত্যেকেই ছিলেন এক একজন যোদ্ধা, আর প্রত্যেকের ত্যাগ আমাদের এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে। রুশ জনগণের জন্য ৯ মে এক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ দিন- এটি আমাদের বীর শহিদদের স্মরণের দিন, প্রবীণ যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন, মুক্তির বিজয়ের প্রতিফলনের দিন। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শান্তি ও স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য বোঝার এক অনন্ত শিক্ষা।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে এই বিজয় দিবস জড়িত ব্যক্তিগত সূত্রেও, কীভাবে?

উত্তর: আমার জন্য এটি এক পবিত্র দিন- প্রার্থনা ও স্মরণের দিন। আমি কখনওই আমার পিতামহ-মাতামহকে দেখিনি। শিশু হিসেবে কখনও পাইনি তাদের স্নেহ, কৈশোরে শুনিনি তাদের জ্ঞানগর্ভ উপদেশ, বড় হয়ে দেখাশোনা করার সুযোগও হয়নি আমার। আমার বাবার পিতা আনাতোলি ইভানোভিচ, যিনি সোভিয়েত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অফিসার ছিলেন, নাৎসি আক্রমণের প্রথম দিনেই, ১৯৪১ সালের ২২ জুন শহিদ হন। আমার মায়ের পিতা ফিওদোর দেনিসোভিচ, একজন পদাতিক সৈন্য, ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বার্লিন অভিযানের সময় শহিদ হন— বিজয়ের মাত্র কয়েকমাস আগে। আমার পরিবার চিরদিন গর্ব করবে তাদের এই আত্মত্যাগ নিয়ে।

প্রশ্ন: বিজয় দিবস বলতে আপনি কী উপলব্ধি করেন?

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় ছিল হিটলার বিরোধী মিত্রশক্তির সকল দেশের সম্মিলিত অর্জন। সকল পার্থক্য বিভেদ ভুলে গিয়ে তারা একসঙ্গে মোকাবিলা করেছিল নাৎসিবাদের মতো একবর্ণবাদী মতাদর্শকে, যা হুমকি দিয়েছিল সমগ্র মানব সভ্যতার অস্তিত্বকে। আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেই সব বীরদের, যাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলেন এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে।

প্রশ্ন: আর ভারতের অবদান নিয়ে আপনি আলাদা করে কী বলতে চাইবেন, কারণ ভারত সেই সময় গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

উত্তর: আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি নাৎসি জার্মানির পরাজয়ে ভারতের অবদানকে। ১৯৪১-৪২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে গঠিত হয়েছিল বিভিন্ন মৈত্রী সংগঠন। বীর ভারতীয় সৈন্যরা পারস্যের পথ দিয়ে রেড আর্মিতে পৌঁছে দিয়েছিলেন অত্যাবশ্যকীয় সরবরাহ, নিয়ে এসেছিলেন লেন্ড-লিজ সাহায্য। ২৫ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় সৈন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ৮৭ হাজারেরও বেশি বীরযোদ্ধা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন।

প্রশ্ন: এবারের বিজয় দিবস কী ভাবে পালিত হবে পৃথিবী জুড়ে?

উত্তর: এ বারের ৯ মে রাশিয়া ও বিশ্বজুড়ে পালিত হবে বিজয় দিবস। রেড স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হবে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ, অজানা সৈনিকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে ‘অমর রেজিমেন্ট’— যে উদ্যাগে মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের ছবি নিয়ে মিছিলে হাঁটে, আজ তা শুধু রাশিয়াতেই নয়, বিশ্বের বহুদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মিছিলে অংশ নেবেন হাজার হাজার রুশ নাগরিক, প্রবাসী রুশ সম্প্রদায় ও অন্য দেশের মানুষও—যাঁরা সম্মান করেন সেই আত্মত্যাগ। আমরা স্মরণ করব যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ উৎসর্গকারী সৈন্যদের, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের, আর দুর্ভিক্ষ ও দুঃখ-কষ্টে মৃত্যুবরণ করা সাধারণ মানুষদের।

এ বারের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন মিত্রদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এবং আমরা সম্মানিত বোধ করব একটি উচ্চপর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে। ২০টি সহযোগী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রশাসনিক প্রধানরা মস্কোর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকবেন। রাশিয়া জুড়ে বিভিন্ন শহরে আয়োজিত হবে স্মরণানুষ্ঠান। বর্তমানে রাশিয়ায় মাত্র সাত হাজার প্রবীণ যোদ্ধা বেঁচে আছেন- প্রত্যেককে করা হবে বিশেষ সম্মানিত, যারা স্বাস্থ্যজনিত কারণে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না, তাদের বাড়িতে গিয়ে জানানো হবে আমাদের কৃতজ্ঞতা।

কলকাতায় রুশ সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আমরা আয়োজন করব বিভিন্ন প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। 'অমর রেজিমেন্ট' কর্মসূচি এবং ‘স্মরণ উদ্যান’ প্রকল্প, হয়ে উঠেছে স্মৃতিচারণার এক শক্তিশালী মাধ্যম। এ বারের অনুষ্ঠানগুলি প্রতিফলিত করবে এই ঐতিহাসিক মাইলফলকের গৌরব।

প্রশ্ন: এতদিন পরে এসেও বিজয় দিবসের ইতিহাস ম্লান হয়নি, আজ, এই সময়ে দাঁড়িয়ে আপনার এই বিশেষ দিনটি নিয়ে কী মনে হয়?

উত্তর: তরুণ প্রজন্মকে এই ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা আমাদের অত্যন্ত জরুরি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারে সেই সব মানুষের ত্যাগের মর্ম, যাঁরা অকল্পনীয় মূল্যে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে এই বিজয় আমাদের সম্মিলিত ঐতিহ্য, যা জাতি ও প্রজন্মের বিভেদ মুছে দেয়। এই বিজয় কেবল একটি সামরিক জয় নয়, এটি মানবতার পক্ষে এক চূড়ান্ত অবস্থান— যা জাতি-ধর্ম-ভাষা পেরিয়ে সকলকে এক করেছে।

তবে, দুঃখের বিষয়, আজ এই ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। যারা নিজেদের রাজনীতি তৈরি করেছে মিথ্যার উপর, তাদের কাছে এই সত্য অস্বস্তিকর। এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রাশিয়া জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে, যা বহু দেশ, ভারতের মতোই, সমর্থন করেছে। এ বছর গৃহীত হয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব— একটি নব্য-নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তি স্মরণে।

১৯৪৫ সালের সেই মহান বিজয় কখনও ম্লান হবে না। কোনও সংশোধনবাদ আমাদের শেখা সত্যকে মুছে ফেলতে পারবে না। আমাদের কর্তব্য অপরিবর্তিত-  ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই পবিত্র স্মৃতি সংরক্ষণ করা। আমরা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি সত্য আর ন্যায়ের পাশে। কেবল আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সত্যকে রক্ষা করতে এবং নব্য-নাৎসিবাদের মতো বিপদের মোকাবিলা করতে।

এই মহান বিজয় দিবসে, আমি সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।


Victory Day of RussiaWorld War IIRussia

নানান খবর

নানান খবর

হঠাৎই দাউদাউ করে জ্বলে উঠল বিমানবন্দরের রানওয়ে, ছুটে দমকল, সিআইএসএফ, তারপর?

ধানবাদের বেআইনি অস্ত্র কারখানার যৌথবাহিনীর হানা, কারখানা মালিক সহ গ্রেপ্তার পাঁচ

মনিপাল হাসপাতালে চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত, রোবটিক স্পাইন সার্জারির জাদুতে নতুন জীবন আবাল বৃদ্ধের

৪৪ হাজারের বেশি শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী পদে নিয়োগ, সুযোগ চাকরিহারাদেরও, জানালেন মমতা

শ্বাসনালীর মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল মরচে ধরা ধাতব পিন, মরণাপন্ন বালকের প্রাণ বাঁচাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

বেলেঘাটায় রক্তারক্তি কাণ্ড, বহুতল থেকে পড়ে রহস্যমৃত্যু বৃদ্ধের

মেট্রো স্টেশনে হলুদ লাইন পেরোলেই বড় শাস্তি, নতুন নিয়ম না জানলে বিপদ আপনার

এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে আগুন আতঙ্ক, আসল কারণ কি?

চরবৃত্তির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়! লাস্য-যোগে অপরাধ, অর্থলোভ না কি মনস্তত্ত্ব?

সোশ্যাল মিডিয়া